১ম অ্যাডভেঞ্চার ও ৭ম গ্রুপ ক্যাম্প
একাত্তর মুক্ত স্কাউট গ্রুপ এর বহু প্রতীক্ষিত অ্যাডভেঞ্চার ক্যাম্প আয়োজিত হয় ১৩-১৬ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে।
“১ম অ্যাডভেঞ্চার ও ৭ম গ্রুপ ক্যাম্প” এ অংশগ্রহন এর উদ্দেশ্যে রোভার স্কাউট লিডার রাজীব পাল এর নেতৃত্বে একাত্তর মুক্ত স্কাউট গ্রুপ এর ১৭ জন সদস্য রাত ১১:০০ টায় ঢাকা থেকে রওয়ানা দেয় বান্দরবান এর উদ্দেশ্যে।
এই ক্যাম্পটির উপলক্ষ্য ছিল শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবস উদযাপন এবং একাত্তর মুক্ত স্কাউট গ্রুপ এর যুগ পূর্তি উৎসব এর সমাপনী হিসেবে।
ক্যাম্প এর থীম ছিল 'নবযুগের উচ্ছাসে, বিজয়ের উল্লাসে'।
ক্যাম্প এর জন্য তিনটি উপদলে ভাগ করা হয়েছিল। উপদলগুলোর নাম বাংলাদেশ এর সর্বোচ্চ তিনটি পর্বতশৃঙ্গ 'সাকা হাফং','তাজিনডং'ও 'কেওক্রাডং' এর নামে করা হয়েছিল।
ভোর ৬:৪০ মিনিট এ আমরা পৌঁছে যাই বান্দরবান বাসস্ট্যান্ড এ।সেখান থেকে রুমা বাসস্ট্যান্ড এ পৌঁছে সকাল এর নাস্তা সেরে ৮:৩০ এর বাসে আমরা যাত্রা শুরু করি রুমা বাজার এর উদ্দেশ্যে। প্রায় তিন ঘন্টা পর ৪৫ কিলোমিটার পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে আমরা পৌঁছাই রুমা বাজার এ।
সেখানে উপজেলা পর্যটন অফিস এ তথ্য জমা দিয়ে ও আর্মি ক্যাম্প এ স্বাক্ষর করে আমাদের গাইড বেলাল ভাইকে সঙ্গে নিয়ে চান্দের গাড়ি ভাড়া করে আমরা যাত্রা শুরু করি বগালেক এর উদ্দেশ্যে।
দুর্গম পাহাড়ি পথ পাড়ি দিতে দিতে ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন গ্রাম ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে আমরা দেড় ঘণ্টার মধ্যে ১৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছে যাই বগালেক এ।
সেখানে ৩:৩৫ এ পৌঁছে আর্মি ক্যাম্প এ চেকইন করে আমরা উঠে যাই কটেজে। সেখানে ব্যাগ রেখে ও হালকা বিশ্রাম নিয়ে আমরা কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে বগালেক এ নেমে গোসল করি। তারপর সেখানে বগালেক পাড়া ও আশেপাশের এলাকায় ঘোরাঘুরি করে ক্যাম্প ফায়ার এর জন্য প্রস্তুতি নিই। ক্যাম্প ফায়ার শেষ করে আমরা সেখানে বারবিকিউ করি ও রাতের খাবার শেষে আমরা সবাই কটেজে গিয়ে আগামী দিনের প্রস্তুতি নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।
১৫ ডিসেম্বর সকাল ৮:০০ টায় আমরা ট্রেকিং শুরু করি কেওক্রাডং এর উদ্দেশ্যে। প্রায় দশ কিলোমিটার এর এই ট্রেকিং এ আমরা বিভিন্ন দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে নিরাপদে পৌঁছে যাই নির্ধারিত গন্তব্যে।
প্রায় এক ঘন্টা ট্রেক করার পর আমরা পৌঁছাই চিংড়ি ঝর্ণায় সেখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করে ও ছবি তুলে আমরা আবার ও রওয়ানা দিই।পথে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে আমরা বেলা ১টায় পৌঁছুই দার্জিলিং পাড়ায়। সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম হিসেবে পরিচিত এই দার্জিলিং পাড়া আসলেই মনোমুগ্ধকর। সেখানে দুপুর এর খাবার সেড়ে আমরা আবারও রওয়ানা হই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চূড়া কেওক্রাডং এর উদ্দেশ্যে। প্রায় এক ঘন্টা ট্রেক করার পর আমরা পৌঁছুতে সক্ষম হই কেওক্রাডং এর চূড়ায়।এত উঁচুতে অনেকের শ্বাসকষ্ট ও উচ্চরক্তচাপ জনিত সমস্যা দেখা দিলেও চূড়ায় পৌঁছে সবাই সব ধরনের কষ্ট ভুলে বাংলাদেশ এর সর্বোচ্চ চূড়ায় ওঠার গৌরব অর্জন করে।
কেওক্রাডং আর্মি ক্যাম্প এ সাইন ইন করার পর হেলিপ্যাড এ আর্মি ক্যাম্প কমান্ডার এর ব্রিফিংয়ের পর আমরা হেলিপ্যাড এ তাঁবু খাটাই।অতঃপর আমরা সন্ধ্যার নাস্তা সেরে কেওক্রাডং এর চূড়ায় বসে ক্যাম্প ফায়ার এর আয়োজন করি যদিও তীব্র বাতাসের কারণে সেখানে আগুন জ্বালানো নিষেধ ছিল তাই আমরা আগুন না জ্বালিয়েই ক্যাম্প ফায়ার আয়োজন করি।
অতঃপর আমরা রাতের খাবারের জন্য আবার নেমে আসি ও খাবারের পর আমরা স্টাফ মিটিং এর মাধ্যমে পরবর্তী দিনের বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে করণীয় সম্পর্কে অবগত হই। তারপর রাতের বেলা পূর্ণিমা ও তারা ও আশেপাশের পাহাড় এর সৌন্দর্য উপভোগ করে রাতে ঘুমোতে যাই।
পরবর্তী দিন ভোর ছয়টায় আমরা জাতীয় পতাকা নিয়ে এবং পরিপূর্ণ স্কাউট ইউনিফর্ম এ হেলিপ্যাড এ তখন কেওক্রাডং এ অবস্থানরত পর্যটকদের নিয়ে সমস্বরে জাতীয় সংগীত গেয়ে বিজয় দিবসের উদযাপন করি। অতঃপর সকালের নাস্তা সেরে ও আর্মি ক্যাম্প এ সাইন আউট করে
আমরা আবারও ট্রেকিং শুরু করি বগালেক এর উদ্দেশ্যে।এই যাত্রায় ৮:৩০ এ রওয়ানা হয়ে আবারও একই পথে যাত্রা করতে করতে ১১:৩০ এ পৌঁছে যাই বগালেক এ। সেখানে আবার ও বিশ্রাম নিয়ে ও গোসল করে আর্মি ক্যাম্প এ সাইন আউট করে চান্দের গাড়ি নিয়ে যাত্রা শুরু করি রুমা বাজার এর উদ্দেশ্যে। সেখানে গিয়ে দুপুরের খাবার সেরে ও আর্মি ক্যাম্প এ সাইন আউট করে আমরা চান্দের গাড়ি নিয়ে যাত্রা শুরু করি বান্দরবান সদরের উদ্দেশ্যে।
এ যাত্রায় আবারো দুর্গম পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে প্রায় ৩ ঘন্টা পর আমরা নিরাপদ এ পৌঁছে যাই বান্দরবান সদর এ।এ যাত্রায় মারমা,বম,ম্রো,মুরং, সাঁওতাল সহ বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর গ্রাম এর মধ্য দিয়ে যেতে থাকি। বান্দরবানে পৌঁছে কেনাকাটা ও রাতের খাবার শেষে আমরা নয়টায় যাত্রা করি ঢাকার উদ্দেশ্যে যার মাধ্যমে শেষ হয় একাত্তর মুক্ত স্কাউট গ্রুপ এর ১ম অ্যাডভেঞ্চার ও ৭ম গ্রুপ ক্যাম্প।